প্রকাশিত: ১২/১২/২০১৬ ৮:০২ এএম

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ও জাবেদ ইকবাল, টেকনাফ ::

বর্বরতার শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে চলছে লুকোচুরি। ত্রাণ দেওয়ার কাজে অচেনা লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। খবর কালেরকন্ঠের

নানা কৌশলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে দেওয়া হচ্ছে নগদ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী। শিবিরের মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা এসব ত্রাণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও গভীর রাতে আলখেল্লা পরা বহিরাগত লোকজনকেও দেখা যায় ওই কাজে। ওই বহিরাগত লোকজন দেখতে বিদেশিদের মতো। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে রাতের আঁধারে সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে নগদ টাকা বিতরণকারীরা পাকিস্তানি ও তুর্কি বলে সন্দেহ অনেকের। কক্সবাজারের সীমান্তে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন করে জঙ্গি উত্থানের আশঙ্কাও করছে তারা।কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা (রোহিঙ্গা মাঝি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন‘ওই বিদেশিরা রাতের কোনো একসময় চুপি চুপি শিবিরে ঢোকে। শিবিরের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের সঙ্গে বিদেশিদের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় চলছে গোপনে ত্রাণ বিতরণের কাজ। ’

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে অনেকটা না দেখার কৌশল নিয়েছে। এ রকম রহস্যজনক ত্রাণ বিতরণের ঘটনা নিয়ে আগে থেকে অবস্থানরত রোহিঙ্গা এবং সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনাও বিরাজ করছে।

এসব বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় জানান, রোহিঙ্গাবিষয়ক ঘটনাবলি সরকারের নজরে রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নতুন শিবিরে অচেনা আগন্তুকদের ত্রাণ বিতরণের প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগে লেদা অনিবন্ধিত শিবিরের প্রবেশপথে দিল মোহাম্মদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে বিজিবি। ওই সময় জব্দ করা হয় প্রায় ৪০০ কেজি চাল ও ৩৫টি কম্বল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৌদি আরবের জিদ্দা কিলোআরবাতাস এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ আব্দুর রহিম ২০০ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য নগদ টাকা, কম্বল ও ২০ কেজি করে চালের ব্যবস্থা করেন। এসব সামগ্রী রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য দিল মোহাম্মদের সাহায্য নেন দমদমিয়া এলাকার হোছন আহমদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোছন আহমদ বলেন, ‘এর আগেও বেশ কয়েকবার লেদা ও শামলাপুর রোহিঙ্গা বস্তিতে হাফেজ আব্দুর রহিমের পাঠানো মালামাল বিতরণ করেছি। আমি সহযোগিতা করেছি মাত্র। কিছু অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে পারছি এখানেই আমার আনন্দ। ’ এ ছাড়া কিছু তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।

জানা যায়, হোয়াইক্যং, উনছিপ্রাং, কুতুপালং, নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির, লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা ও যৎসামান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে আগন্তুকরা। ত্রাণ বিতরণের ছবি ধারণ করে তারা দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে খোদ রোহিঙ্গারাই। টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্তবর্তী লোকজনের আশঙ্কা, এভাবে অচেনা লোকজন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ দিতে থাকলে দলে দলে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তির চেয়ারম্যান দুদু মিয়া বলেন, মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে আগন্তুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। তারা যেনতেনভাবে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করে যাচ্ছে। ফলে শিবিরের ভেতর নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যাদের ত্রাণ পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গা বস্তিতে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ত্রাণ দিতে হলে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা রোহিঙ্গা নেতাদের মাধ্যমে নতুন অনুপ্রবেশকারীদের দেওয়া উচিত।

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের সেক্রেটারি আমির হোসেন বলেন, ‘আগন্তুক হুজুররা এসে নগদ টাকা প্রদান করে যাচ্ছেন। পুরনো ও নতুন রোহিঙ্গারা টাকা না পেয়ে বিতরণকারী কয়েকজন হুজুরকে নাজেহাল করেছে। এভাবে ত্রাণ বিতরণ চলতে থাকলে নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। ’

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার জানান, কে বা কারা এসব ত্রাণ বা নগদ টাকা বিলিয়ে দিচ্ছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। তবে বিষয়টি শুনে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, ‘ত্রাণ ও টাকা বিতরণের খবর পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মডেল থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। কে বা কারা বিতরণ করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে—এমন সংবাদ আমাদের নজরে আসছে। পুলিশ কৌশলে এদের কার্যক্রম মনিটর করছে। যেকোনো মুহূর্তে ওই সব স্থানে অভিযানেরও পরিকল্পনা আছে। ’

রোহিঙ্গাবোঝাই ১৩ নৌকা ফেরত : টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গাবোঝাই ১৩টি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। গতকাল রবিবার ভোরে নাফ নদের দুটি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...